পরিবেশ দর্শন
পরিবেশ দর্শন (Environmental philosophy) হচ্ছে দর্শনের একটি শাখা যা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সেখানে মানুষের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করে।[১] এটি মানুষের সাথে পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, যেমন "যখন আমরা প্রকৃতি নিয়ে কথা বলি তখন কী বুঝিয়ে থাকি?", "যা আমাদের কাছে অ-মানব পরিবেশ তার মূল্য কী?", "পরিবেশগত সমস্যাগুলো যেমন পরিবেশ বিপর্যয়, দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের কীভাবে সারাপ্রদান করা উচিত", "কীভাবে আমরা প্রাকৃতিক জগৎ এবং মানব প্রযুক্তি ও উন্নয়নের মধ্যকার সম্পর্ক সবচেয়ে ভালভাবে বুঝতে পারব?" এবং "এই প্রাকৃতিক জগতে আমাদের স্থান কী?"। এত জন্যই এটি ২১ শতকের হুমকির মোকাবেলা করার জন্য পরিবেশ দর্শন একটি স্বতন্ত্র স্থান করে নিয়েছে। পরিবেশ দর্শনের আলোচনায় পরিবেশ নীতিশাস্ত্র, পরিবেশ নন্দনতত্ত্ব, পরিবেশ নারীবাদ, এনভায়রনমেন্টাল হারমেনিউটিক্স এবং পরিবেশ ধর্মতত্ত্ব পড়ে।[২] পরিবেশ দার্শনিকদের প্রধান আগ্রহের বিষয়সমূহের কয়েকটি হল:
- পরিবেশ ও প্রকৃতিকে সংজ্ঞায়িত করা
- কীভাবে পরিবেশকে মূল্যায়ন করা যায়
- প্রাণী এবং উদ্ভিদের নৈতিক মর্যাদা
- বিপদশংকুল প্রজাতি
- পরিবেশবাদ (Environmentalism) এবং গভীর বাস্তুসংস্থান (Deep Ecology)
- পরিবেশের নান্দনিক মূল্য
- প্রকৃতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা
- ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিবেচনা[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]পরিবেশগত দর্শন ১৯৭০-এর দশকে দর্শনের একটি শাখা হিসাবে প্রথম উদ্ভূত হয়। সেই সময়কার উল্লেখযোগ্য পরিবেশ দার্শনিকদের মধ্যে রয়েছেন সৈয়দ হোসেন নাসর, রিচার্ড রাউটলি, আরনে নেস, এবং জে. বেয়ার্ড ক্যালিকট প্রমুখ। এই দর্শনে ইতিহাস জুড়ে মানবতার প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতির সাথে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা ছিল।[৩] পরিবেশ নারীবাদ, যা এই সময়েই বিকাশিত হয়েছিল, পরিবেশ দর্শনের একটি আন্তঃসম্পর্কিত শৃঙ্খলা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর আলোচনার বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই ক্ষেত্রটি বর্তমানে মানুষের পরিবেশগত সম্পর্কের প্রতি স্টাইলিস্টিক, দার্শনিক এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য দ্বারা চিহ্নিত। এতে ব্যক্তিগত এবং কাব্যিক পরিবেশগত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন, প্যানসাইকিজমের পক্ষে যুক্তি, ম্যালথুসিয়ান তত্ত্বের প্রয়োগ, অথবা প্রকৃতির অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণের প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭০ এবং ৮০-এর দশকে একটি বড় বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছিল যে প্রকৃতির নিজস্ব অন্তর্নিহিত মূল্য আছে কিনা যা মানবিক মূল্যবোধের থেকে স্বাধীন, নাকি এর মূল্য শুধুমাত্র উপযোগবাদী, যেখানে একদিকে উদ্ভূত হয়েছিল পরিবেশকেন্দ্রিক বা গভীর পরিবেশবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং অন্যদিকে ফলবাদী বা বাস্তববাদী মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।[৪] এই সময়ে আরেকটি বিতর্ক উঠেছিল, যে বন্য প্রকৃতি বলে আদৌ কিছু আছে, নাকি এটি শুধুমাত্র ঔপনিবেশিকতাবাদী ইঙ্গিতসম্বলিত একটি সাংস্কৃতিক নির্মাণ, যেমনটি উইলিয়াম ক্রোনন প্রস্তাব করেছিলেন। এরপর থেকে পরিবেশগত ইতিহাস এবং বক্তব্যের বিশ্লেষণ আরও সমালোচনামূলক ও পরিশীলিত হয়েছে। এই চলমান বিতর্কে, বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে ভিন্নমত পোষণকারী বিভিন্ন কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে, যারা পশ্চিমা ধারণাগুলোর আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এর ফলে এই ক্ষেত্রটি একটি বৈশ্বিক চিন্তা ক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়েছে।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Belshaw, Christopher (২০০১)। Environmental Philosophy। Chesham: Acumen। আইএসবিএন 1-902683-21-8।
- ↑ "International Association of Environmental Philosophy"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-৩০।
- ↑ Weston, 1999. "An Invitation to Environmental Philosophy," Oxford University Press, New York, New York.
- ↑ Benson, John, ২০০০. Environmental Ethics: An Introduction with Readings, Psychology Press.
- ↑ Callicott, J. Baird, and Michael Nelson, ১৯৯৮. Great New Wilderness Debate, University of Georgia Press.