আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) عبد الله ابن عباس | |
---|---|
উপাধি | হিবর-উল-উম্মাহ,রইসুল মুফাস্সিরিন |
জন্ম | 'আবদুল্লাহ ইবনে আল- আব্বাস (রাঃ)' ৬১৯ খ্রি. মক্কা, হেজাজ[১] |
মৃত্যু | ৬৮৭ খ্রি. তায়েফ, সৌদি আরব |
অন্য নাম | আল -হিবর, (চিকিৎসক); আল -বাহর, (সমুদ্র) |
জাতিভুক্ত | আরব |
পেশা | তাফসির, কুরআন এবং সুন্নাহ, হাদিস[১] ইসলামি স্বর্ণযুগে |
শিষ্য ছিলেন | মুহাম্মদ (স:)-এর |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন
| |
দাম্পত্য সঙ্গী | যাহরা বিনতে মিসরাহ |
সন্তান | ছেলে:আল -আব্বাস, আলী ইবনে আব্দুল্লাহ, মুহাম্মাদ, উবায়দুল্লাহ, আল-ফাদল এবং সাদ। কন্যা: লুবাবা এবং আসমা |
পিতা-মাতা | |
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (আরবি :عبد اللہ ابن عباس) ইসলামের নবী মুহাম্মাদের একজন সাহাবী। মুহাম্মাদের আবদুল্লাহ নামক চার জন বিশিষ্ট সাহাবী - যাদেরকে একত্রে ' عبادلۃ اربعۃ 'বলা হয়, তিনি তাদের অন্যতম। তিনি কুরাইশ বংশের হাশেমি শাখার সন্তান। মুহাম্মাদের সর্বকনিষ্ঠ চাচা আব্বাসের জ্যেষ্ঠ ছেলে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ছিলেন একজন বিশিষ্ট সুবিজ্ঞ ফকিহ ও আল-কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় মুফাস্সির।[৭][৮] মুসলিম বিশ্বে তাকে রইসুল মুফাস্সিরিন বা সাইয়্যিদুল মুফাস্সিরিন (> প্রধান) বলা হয় ।
উপাধি
[সম্পাদনা]আল হিবর বা হিবরুল উম্মাহ্ অর্থাৎ মহাজ্ঞানী বা আল-বাহ্র অর্থাৎ সাগর। কারণ যে কোন দ্বীনি জিজ্ঞাসার জবাব তিনি প্রজ্ঞার সাথে উপস্থাপন করতেন। এক অনন্য ইসলাম ধর্মবিশারদ বলে তাকে মনে করা হতো। আর এ জন্যেই তার উপাধি হিবরুল উম্মাহ্।
নসবনামা
[সম্পাদনা]আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আবদে মান্নাফ ।
পিতা-মাতা
[সম্পাদনা]তার পিতা হলেন মুহাম্মাদের আপন চাচা আব্বাস। পুরো নাম আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। মাতার নাম উম্মুল ফাদল লুবাবা বিনতে আল হারিস।
জন্ম
[সম্পাদনা]তিনি মুহাম্মাদের হিজরতের তিন বছর পূর্বে মক্কায় ' শিআবে আবি তালিব '-এ জন্ম গ্রহণ করেন। কারো কারো মতে, হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন । তবে প্রথম মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য ও সঠিক ।[৯] কুরাইশরা তার গোত্র বনু হাশিমকে বয়কট করার কারণে তারা তখন শিয়াবে আবী তালিবে জীবন যাপন করছিলেন৷ হযরত আব্দুল্লাহর পিতা হযরত আব্বাস দৃশ্যতঃ মক্কা বিজয়ের অল্প কিছুদিন পূর্বে হিজরি চতুর্থ সনে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইবনে সাদের বর্ণনা মতে, উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজার পর উম্মুল ফজলই (আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এর মাতা ) মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইমান আনেন। তাই হযরত আব্দুল্লাহ জন্মের পর থেকেই তাওহিদের পরিবেশে বেড়ে উঠেন এবং বিবেক বুদ্ধি হওয়ার পর এক মজবুত ঈমানের অধিকারী মুসলমান হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন।
জন্মের পূর্বাপর বৃত্তান্ত
[সম্পাদনা]আল্লামা ইবনে কাসির বলেন,- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস স্বীয় জন্মের ওয়াকিয়া এভাবে বর্ণনা করেন যে, যখন হযরত নবি করিম (স.) শিআবে আবু তালিবে অন্তরীণ অবস্থায় জীবন যাপন করছিলেন - সে সময় একদিন আমার পিতা নবীজির খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন, "হে মুহাম্মাদ (স.)! উম্মুল ফজল তো সন্তান প্রসবা-গর্ভবতী ।" নবী করিম (স.) এই খবর শুনে বললেন, " চাচা, আল্লাহ আপনাদের চক্ষুদ্বয় শীতল করুক (অর্থাৎ চোখ জুড়ানো সন্তান দান করুক) ।" ইবনে আব্বাস বলেন - যখন আমার সম্মানিত মা-এর পবিত্র গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণ করলাম তখন আমার পিতা আমাকে এক টুকরো কাপড়ে জড়িয়ে কোলে করে নবীজির কাছে নিয়ে গেলেন। নবি করিম (স.) আমার মুখে উনার একটু থুথু মোবারক দিয়ে 'তাহ্নিক' করলেন ।[১০] অন্য বর্ণনায় এসেছে যে,- নবীজি শিশু আবদুল্লাহর মুখে একটু থুথু মোবারক দিয়ে তাহ্নিক করেন এবং এই বলে দোয়া করেন - اللَّهُمَّ فَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وَعَلِّمْهُ التَّأْوِيلَ
(আল্লাহুম্মা ফাক্কিহহু ফিদ্দিন ওয়া আল্লিমহুত তাওয়িল) অর্থাৎ- " হে আল্লাহ! আপনি তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করুন এবং তাকে তাফসিরের অগাধ জ্ঞান দান করুন !"[১১][১২][১৩][১৪]
ইসলাম গ্রহণ
[সম্পাদনা]হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এর জননী হিজরতের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন বিধায় তকে আশৈশব মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হয়।
বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা
[সম্পাদনা]তিনি সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবীদের অন্যতম । আল্লামা আইনির মতে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ১৬৬০ টি । কারো মতে ২৬৬০ টি । বুখারী শরিফে ও মুসলিম শরিফে যৌথভাবে ৯৫ টি, এককভাবে বুখারীতে ১২০ টি এবং মুসলিমে ৪৯ টি হাদিস উল্লেখ রয়েছে।[১৪]
তার গ্রন্থ সমূহ
[সম্পাদনা]আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর তাফসিরের নাম “তানওয়ীর আলমিকবাস মিন তাফসীর ইবন আব্বাস” ।
তার সম্পর্কে সাহাবিদের উক্তি
[সম্পাদনা]- ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব ইবনে আব্বাস সম্পর্কে বলেন,
“ | ইবনে আব্বাস তোমাদের সকলের অপেক্ষা বড় বিদ্বান । | ” |
উমর তার সম্পর্কে আরও বলতেন যে,
“ | সে বয়সে তরুণ, জ্ঞানে প্রবীণ ! | ” |
- ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলি কার্মাল্লাহু ওয়াজহাহু তার সম্পর্কে বলেন, " কুরআন কারিমের তাফসীর বর্ণনার সময় মনে হয় যেন তিনি (ইবনে আব্বাস) একটি স্বচ্ছ পর্দার অন্তরাল হতে অদৃশ্য বস্তুসমূহ প্রত্যক্ষ করছেন ।"
- ইবনে মাসউদ বলতেন, " ইনি কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার ।"
- ইবনে উমর বলতেন, " মুহাম্মাদের উপর যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তৎসম্পর্কে ইবনে আব্বাস এই উম্মাতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ।"[১৫]
ইন্তিকাল
[সম্পাদনা]আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বার্ধক্য জীবনে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন । তিনি ইবনে জুবায়েরের শাসনামলে ৬৮ হিজরি, ৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তায়েফে মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়্যা তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন ।তায়েফ নগরে ‘মসজিদে ইবন আব্বাস’ নামক বিশাল মসজিদটি আজও তাঁর স্মৃতি বহন করে চলেছে। এ মসজিদেরই পেছনের দিকে এক পাশে এ মহান সাহাবীর কবর। তাঁকে কবরে সমাহিত করার পর কুরআনের এ আয়াতটি পঠিত হয়েছিলঃ
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ – ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً – فَادْخُلِي فِي عِبَادِي – وَادْخُلِي جَنَّتِي –
‘হে পরিতুষ্ট আত্মা! তুমি প্রসন্ন ও সন্তুষ্ট অবস্থায় তোমার প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন কর। অতঃপর আমার বান্দাগণের মধ্যে প্রবিষ্ট হও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (আল-ফজরঃ ২৭-৩০)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ biography আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ২৮ মে ২০০৯ তারিখে on the MSA West Compendium of Muslim Texts
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ Jewish Encyclopedia [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Media Monitors Network, A Few Comments on Tafsir of the Quran, Habib Siddiqui October 2004
- ↑ Mashahir, 99-Too; Ghaya, 1. 283; Abu Nuʿaym, II. 105-19; Kashif, I. 235; Ibn Marthad 41-3
- ↑ "usulgloss2"। ১৫ নভেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ "'Abd Allah ibn al-'Abbas"। Encyclopædia Britannica। I: A-Ak - Bayes (15th সংস্করণ)। Chicago, Illinois: Encyclopædia Britannica, Inc.। ২০১০। পৃষ্ঠা 16। আইএসবিএন 978-1-59339-837-8।
- ↑ Adamec, Ludwig W. (২০০৯)। Historical dictionary of Islam (২য় সংস্করণ)। Lanham, Md.: Scarecrow Press। পৃষ্ঠা ১৩৪। আইএসবিএন 978-0-8108-6303-3। ওসিএলসি 434040868।
- ↑ الاصابہ فی تمیز الصحابہ : ابن حجر عسقلانی - تذکرہ ابن عباس - جلد اول - صفحہ ۳۲۲ ۔
- ↑ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (উর্দু) ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৫
- ↑ البخاري ( 143 ) ، ومسلم ( 2477 )
- ↑ الإمام أحمد في " المسند " ( 4 / 225 )
- ↑ وصححہ الألباني في " السلسلة الصحيحة " ( 6 / 173 )
- ↑ ক খ আসমাউর রিজাল বা রাবি চরিত - আ.ন.ম.মাঈন উদ্দিন সিরাজী,এম.এম; এম.এফ; এম.এ প্রথম শ্রেণি, প্রধান মুহাদ্দিস-দুর্বাটি এম.ইউ আলিয়া মাদরাসা; প্রাক্তন মুহাদ্দিস আলম শাহ পাড়া আলিয়া মাদরাসা, চট্টগ্রাম । পরিবেশয়নায়ঃ আল-বারাকা লাইব্রেরি, ৩৪ নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ ।
- ↑ تفسير ابن عباس (اردو) ۔ جلد اول ۔ موءلف: ابو طاھر محمد بن يعقوب الفروز آبادی ۔ مترجم :مولانا پرو فيسر محمد سعيد احمد عاطف ۔ ناشر :مکی دارالکتب ، ۳۷ مزنگ روڈ ، لاھور