ইরিনিস
ইরিনিস (গ্রিক: Ἐρινύες, ইংরেজি: Furies) প্রাচীন গ্রিক পুরাণে অভিশাপ ও প্রতিশোধের নারীরূপ। পৃথিবীর দেবী গাইয়া ও আকাশের দেবতা উরানোসের কন্যা, এবং দৈত্য আর টাইটানদের বোন হিসেবেও তারা পরিচিত। অন্য অনেক কিছুর মতো এদেরকেও রোমানরা তাদের নিজেদের পুরাণের অংশ ক’রে নিয়েছিল। ইউরোপের ধ্রুপদী যেসব সাহিত্যে এদের উল্লেখ পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে হেসিয়ডের থিওগনি, হোমারের ইলিয়াড ও অডিসি, ওভিডের মেটামর্ফোসেস, কবি পিন্দারের অলিপিয়ান ঔড্স এবং ভার্জিলের ইনিড।[১]
এস্কিলাস, ওভিড ও ভার্জিল এদেরকে রাত অর্থাৎ নিশাদেবীর কন্যা হিসেবে চিত্রিত করেছেন, কিন্তু আদি উৎসে তারা গাইয়ার কন্যাই ছিল। থিওগনিতে আছে, কাল ও মহাকাল-রূপী ক্রোনোস যখন তার পিতা উরানোসের লিঙ্গ কেটে দেয় তখন লিঙ্গনিঃসৃত রক্তের মাধ্যমে গাইয়ার গর্ভে ইরিনিসদের জন্ম হয়। অর্ফিয়াসের উদ্দেশ্যে নিবেদিত স্তোত্রে তাদেরকে টেসিফোন, মেগারা, আলেক্তো নামে ডাকা হয়েছে। তাদের নামের একটি ইউফেমিজম (সুভাষণ) হচ্ছে ইউমিনিদিস যার অর্থ দয়ালু, অর্থাৎ তাদের আসল চরিত্রের ঠিক বিপরীত। আরেকটি সুভাষণ সেম্নাই বা সম্মানিত। বিখ্যাত ট্র্যাজিক নাট্যকার এস্কিলাস এদের নিয়ে ইউমিনিদিস নামে একটা আলাদা নাটকই লিখেছেন।
তাদের রূপ ও বেশভূষা ভয়ংকর। এস্কিলাস লিখেছেন, তারা সব সময় কালো পোশাক পরে, তাদের চুল গর্গনের চুলের মতো সাপ দিয়ে তৈরি। অন্য জায়গায় পাওয়া যায়, তাদের চোখ থেকে রক্ত ঝরে। ইরিনিস বা ফিউরি-দের প্রধান কাজ পরিবারের ভিতরে সংঘটিত খুনের প্রতিশোধ নেয়া। তবে অন্য আরো অনেক অপরাধের বিচারক হিসেবেও তাদের দেখা গেছে। যেমন, শপথ ভঙ্গ করা, বড়দের অসম্মান করা, অতিথিদের যথেষ্ট সেবা না করা, ইত্যাদি। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইরিনিস থামে না, তাদেরকে থামানোর ক্ষমতা কারো নেই।
এস্কিলাসের অরেস্তিয়া নাটকে দেখানো হয়, আগামেম্ননের ছেলে অরেস্টিস পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে নিজের মা ক্লিতেম্নেস্ত্রা-কে খুন করে, কিন্তু তার পর থেকে ইরিনিসিরা তাকে তাড়া করা শুরু করে। মাতৃহত্যার প্রতিশোধ না নেয়া পর্যন্ত তারা কোনোভাবেই থামতে রাজি ছিল না। পরে আরো দুটি নাটকে এস্কিলাস এই কাহিনি চালিয়ে যান। তিন পর্বের শেষ পর্বটি ছিল ইউমিনিদিস যাতে অ্যাথেন্সের দেবী অ্যাথিনা অনেক কষ্টে ইরিনিসিদের নিরস্ত্র করেন। এর পর থেকে অরেস্টিসের পশ্চাদ্ধাবনের বদলে তাদের দায়িত্ব হয় অ্যাথেন্স নগরী রক্ষা করা, এজন্যই তাদের নতুন নাম হয়েছিল ইউমিনিদিস।[২]