Location via proxy:   [ UP ]  
[Report a bug]   [Manage cookies]                
বিষয়বস্তুতে চলুন

জগন্নাথপুর উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৬′ উত্তর ৯১°৩৩′ পূর্ব / ২৪.৭৬৭° উত্তর ৯১.৫৫০° পূর্ব / 24.767; 91.550
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জগন্নাথপুর
উপজেলা
মানচিত্রে জগন্নাথপুর উপজেলা
মানচিত্রে জগন্নাথপুর উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৬′ উত্তর ৯১°৩৩′ পূর্ব / ২৪.৭৬৭° উত্তর ৯১.৫৫০° পূর্ব / 24.767; 91.550 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগসিলেট বিভাগ
জেলাসুনামগঞ্জ জেলা
প্রতিষ্ঠা২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩
আসনসুনামগঞ্জ-৩
সরকার
 • সংসদ সদস্যসংসদ বিলুপ্ত
আয়তন
 • মোট৩৬৮.২৭ বর্গকিমি (১৪২.১৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[]
 • মোট২,৫৯,৪৯০
 • জনঘনত্ব৭০০/বর্গকিমি (১,৮০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৫৪%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৬০ ৯০ ৪৭
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

জগন্নাথপুর বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। বাংলাদেশে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর ১৯৮৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জগন্নাথপুর থানাকে উপজেলায় উত্তীর্ণ করা হয়।

অবস্থান ও আয়তন

[সম্পাদনা]

জগন্নাথপুর ৩৫৫.৯১ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে অবস্থিত। এই উপজেলার উত্তরে ছাতক উপজেলাশান্তিগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলাওসমানীনগর উপজেলা, পশ্চিমে দিরাই উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা

[সম্পাদনা]
মানচিত্রে জগন্নাথপুর উপজেলা।
মানচিত্রে জগন্নাথপুর উপজেলা।

জগন্নাথপুর উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম জগন্নাথপুর থানার আওতাধীন।[]

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে লাউড় রাজ্যের অধিপতি ছিলেন রাজা বিজয় মাণিক্য। তৎকালে তিনি জগন্নাথ মিশ্রকে দিয়ে বাসুদেব মন্দির প্রতিষ্ঠা করান। পরবর্তীতে এই স্থানকে জগন্নাথ মিশ্রের নামানুসারে “জগন্নাথপুর” বলে ঘোষণা করেন। আর সেই থেকে জগন্নাথপুর রাজা বিজয় মাণিক্যের রাজ্য বলে ঘোষিত। জগন্নাথপুরের পাণ্ডুয়া থেকে রাজা বিজয় মাণিক্য সেই সময় নিজ নামের সঙ্গে দুই স্ত্রীর নাম যুক্ত করে ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে সিক্কা মুদ্রা প্রকাশ করেছিলেন। এই সিক্কা মুদ্রাই রাজা বিজয় মাণিক্যের রাজ্যের প্রমাণ, যা কুবাজপুর গ্রামের মদনমোহন চৌধুরীর পরিবারদের কাছে সংরক্ষিত আছে।[]। জগন্নাথপুর এককালে বর্তমান ভৌগোলিক সীমানার চেয়ে আরও বড় ছিল। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জগন্নাথপুর রাজ্য লাউড়ের শাখা-রাজ্য ছিল এবং বংশানুক্রমে লাউড়ের নৃপতিগণ কর্তৃক শাসিত হত। দিল্লি সম্রাটদের রেকর্ডে জগন্নাথপুর রাজ্য লাউড়ের এজমালি সম্পদ হিসেবে বিবেচিত এবং শ্রীহট্টের ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে, উক্ত লাউড় রাজ্য সর্বদা মোগল সম্রাটদের কাছে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে গণ্য ছিল। তাই জগন্নাথপুর রাজ্যের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে প্রাচীন লাউড় রাজ্যের কথা চলে আসে, কারণ এর পত্তনস্থলই হচ্ছে প্রাচীন লাউড়। প্রাচীন লাউড়ের পত্তন সম্পর্ক মূলত প্রাচীন কামরূপ।[] বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ (৬০২–৬৬৪) কামরূপ রাজার আমন্ত্রণে ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে এদেশে ভ্রমণে এলে শ্রীহট্টকে কামরূপ রাজ্যের অংশ বলে উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, বিভিন্ন বৌদ্ধগ্রন্থেও সিলেটকে সমুদ্র নিকটবর্তী বলা হয়েছে। এছাড়া নিধনপুরে প্রাপ্ত তাম্রলিপিগুলোও তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।[]

খ্রিস্টপূর্ব ত্রিশ শতাব্দীতে ভগদত্ত নামের জনৈক নৃপতি কামরূপে রাজত্ব করতেন। তার রাজ্য বিবরণে বলা হয় যে, তৎকালে লাউড়ের পাহাড়ে ভগদত্ত রাজার একটি শাখা-রাজধানী ছিল। তিনি যখনই এদেশে আসতেন সেখানেই অবস্থান করতেন এবং লাউড় থেকে দিনারপুর পর্যন্ত নৌকাযোগে ভ্রমণ করতেন। উপরে উল্লেখিত ঐতিহাসিক আলোচনায় প্রমাণ হয় যে, প্রাচীন শ্রীহট্টের নিম্নাঞ্চল তখনকার যুগে গভীর পানির নিচে নিমজ্জিত ছিল। উল্লেখ্য, মহাভারত গ্রন্থের সভাপর্বে লিখিত: “ভিম পণ্ডু বঙ্গদেশ জয় করিয়া তাম্রলিপ্ত এবং সাগরকুলবাসী ম্লেচ্ছদিগকে জয় করেন।” এই তথ্যের ভিত্তিতে ভূতত্ত্ব বিষয়ের পণ্ডিত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বঙ্গে প্রবেশাধিকার গ্রন্থে মহাভারতে উল্লেখিত বঙ্গ উত্তর-পূর্ব বঙ্গদেশ অর্থে প্রাচীন লাউড় অঞ্চল বলেছেন। সুতরাং উল্লেখিত লাউড় শ্রীহট্টই নয়, বঙ্গ হতেও প্রাচীন। পুরাতাত্ত্বিক রমেশচন্দ্র দত্তের মতে ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী কামরূপ রাজ্যের বিস্তৃতি প্রায় ২,০০০ মাইল। আসাম, মণিপুর, ময়মনসিংহ, শ্রীহট্ট, কাছাড় প্রভৃতি নিয়ে কামরূপ বিস্তৃত ছিল।[] সুতরাং, এদিক থেকে বিবেচনায় প্রতিপাদ হয় যে নৃপতি ভগদত্তের লাউড় রাজ্য মহাভারতকালের চেয়েও প্রাচীন। মহাকাব্য মহাভারতে প্রমাণ মেলে যে রাজা ভগদত্ত যুদ্ধে মহাবীর অর্জুন কর্তৃক নিহত হন। ভগদত্ত রাজার পরে তার পুত্রগণের মধ্যে ১৯ জন নৃপতি পর্যায়ক্রমে কামরূপ তথা লাউড়ে রাজত্ব করেন। ভাটেরায় প্রাপ্ত তাম্রফলকে বর্মান, ঈশানদেব তাদেরই বংশধর বলে ইতিহাসবেত্তাগণ উল্লেখ করেছেন। এই রাজাগণ চন্দ্রবংশীয় বলে খ্যাত। উক্ত ১৯ জন নৃপতির অনেকদিন পরে প্রাচীন লাউড় রাজ্যে নৃপতি বিজয় মাণিক্য আবির্ভুত হন। ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে বিজয় মাণিক্য জগন্নাথপুর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং ছিক্কা মুদ্রার প্রচার করেন।

অন্যদিকে ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে ইয়েমেনদেশীয় তাপস হজরত শাহজালাল (রহ.) ৩৬০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে প্রাচীন শ্রীহট্টের গৌড় রাজ্য জয় করেন। শাহজালালের এই সঙ্গী ও অনুসারীগণ ইসলামের পবিত্র বাণী নিয়ে শ্রীহট্টসহ বঙ্গদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। তারই ধারাবাহিকতায় ৩৬০ আউলিয়ার মধ্য থেকে পর্যায়ক্রমে হজরত শাহ কালাম উদ্দীন কোহাফার নেতৃত্বে ১২ জন আউলিয়া জগন্নাথপুর রাজ্যে আসেন।[] আগত আউলিয়াদের নাম ও বর্তমানে অবস্থিত মাজার যথাক্রমে: ১. হজরত শাহ কালাম কোহাফা – শাহারপাড়া গ্রাম; ২. সৈয়দ শামস উদ্দিন – সৈয়দপুর গ্রাম, ৩. শাহ কালু – পীরেরগাঁও, ৪. শাহ চান্দ – চান্দভরাং, ৫. দাওর বখশ খতিব ও দিলওয়ার বখশ খতিব – দাওরশাহী বা দাওরাই গ্রাম, ৬. শাহ ফৈজ উদ্দিন বা ফেছন উদ্দিন – ফৈজি বা ফেছি গ্রাম, ৭. সৈয়দ শামস উদ্দিন বিহারি – আটঘর গ্রাম, ৮. শাহ মানিক – মণিহারা গ্রাম, ৯. শাহ জলাল উদ্দিন – কুসিপুর বা কুস্কিপুর গ্রাম, ১০. সৈয়দ বাহাউদ্দিন – মুকান বাজার, ১১. সৈয়দ রুকনুদ্দিন – কদমহটি, ১২. সৈয়দ তাজউদ্দিন – অরম্পুর, সৈয়দ জিয়া উদ্দিন - মুকান বাজার। উল্লেখ যে, মীরপুরে অবস্থানরত শাহ চান্দ পরবর্তিতে চান্দভরাং গ্রামে চলে যান এবং সেখানেই বর্তমানে তার মাজার অবস্থিত।[]

উল্লিখিত বিজয় মাণিক্যের অনেক কাল পরে লাউড় ও জগন্নাথপুর রাজ্যে দিব্য সিংহ নামে নৃপতি রাজত্ব করেন। তখন লাউড়ের রাজধানী নবগ্রামে স্থানান্তর হয়। যে নবগ্রাম বৈষ্ণবীয় ধর্মাবতার অদ্বৈতের জন্মস্থান বলে আখ্যায়িত। রাজা দিব্য সিংহ রাজ্যভার তার পুত্র রামানাথকে দিয়ে শান্তি সাধনায় তার মন্ত্রীতনয় অদ্বৈতের আখড়া শান্তিপুরে চলে যান। সেখানে থেকে অদ্বৈতের উপদেশে বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেন এবং অদ্বৈত বাল্যলীলা গ্রন্থ রচনা করে কৃষ্ণদাস নামে খ্যাত হন। রাজা দিব্য সিংহের পুত্র রামানাথ সিংহের তিন পুত্র হয়। এই তিন পুত্রের মধ্যে একজন কাশীবাসী হন এবং এক পুত্রকে লাউড়ের রাজ সিংহাসনে বসিয়ে রামানাথ সিংহ তার অন্য পুত্র কেশবের সাথে জগন্নাথপুরে আসেন। প্রায় পঞ্চদশ শতাব্দীর সময়কালে রামানাথের পুত্র কেশব সিংহ সেখানকার রাজা হন। উল্লেখ্য যে, এ সময়ে আজমিরীগঞ্জ এলাকায় বানিয়াচঙে অন্য একটি নবরাজ্যের আর্বিভাব ঘটে। এই নব্য আবিষ্কৃত রাজ্যের রাজার নামও কেশব ছিল। অচ্যুতচরণ চৌধুরী লিখেছেন যে, “নব্য আবিস্কৃত বানিয়াচং রাজ্যের রাজার নাম এবং জগন্নাথপুর রাজ্যের রাজার নাম এক থাকায়, অনেক লেখক ভ্রমে পতিত হইয়া জগন্নাথপুর ও বানিয়াচঙের রাজ পরিবারকে এক বংশের বলিয়া যেভাবে আখ্যায়িত করেন, আসলে ইহারা এক নহেন। বানিয়াচং রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কেশব একজন বণিক ছিলেন। তিনি বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এদেশে আসিয়াছিলেন এবং কালী নামের দেবীর পূজা নির্বাহের লক্ষ্যে দৈব্যে শ্রুত শুষ্কভূমির সন্ধান প্রাপ্ত হইয়া সেখানে অবতরণ করিয়া দেবীপূজা সমাধান করিয়া দৈবাভিপ্রায় মতে সেখানেই বসতি স্থাপন করেন। এছাড়া জগন্নাথপুর রাজ্যের কেশব রাজার পুত্রের নাম শনি, তাহার পুত্র প্রজাপতি, প্রজাপতির পুত্র দুর্বার। অন্যদিকে বানিয়াচঙের কেশব রাজার পুত্রের নাম দক্ষ, দক্ষের পুত্র নন্দন, তাহার পুত্র গণপতি ও কল্যাণ। সুতরাং ইহাদের বংশীয় ধারায়ও ইহা প্রতিপাদিত হয় যে, জগন্নাথপুরের কেশব ও বানিয়াচঙের রাজা কেশব দুই ব্যক্তি, উহারা এক নহেন।[]

প্রায় পঞ্চদশ শতাব্দির কালে রামানাথের পুত্র কেশব সিংহ জগন্নাথপুরে রাজ্যত্ব করেন। মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রি.) লাউড়ের রাজা গোবিন্দ সিংহ তার জ্ঞাতি ভ্রাতা জগন্নাথপুরের রাজা বিজয় সিংহের সঙ্গে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়েছিলেন। তখন ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের রাজধানী সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ‘হলহলিয়ায়' ছিল, এখানকার ধ্বংসাবশেষও তাই জানান দিচ্ছে। রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ হলহলিয়া গ্রামে এখনো বিদ্যমান। এই রাজধানী প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব মিশ্র। তারা ছিলেন কাত্যান গোত্রীয় মিশ্র। তাদের উপাধি ছিল সিংহ। রাজা বিজয় সিংহ গোবিন্দ সিংহকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে সম্রাট আকবরের বিচার প্রার্থনা করেন। সম্রাট আকবর দিল্লি থেকে সৈন্য পাঠিয়ে গোবিন্দ সিংহকে দিল্লিতে ডেকে নেন। গোবিন্দ সিংহের অপর নাম ছিল জয় সিংহ। একই সময়ে ফাঁসির হুকুম প্রাপ্ত বানিয়াচং রাজ্যের জয় সিংহ নামের রাজা গোবিন্দ সিংহের সঙ্গে সম্রাট আকবরের কারাগারে আটক ছিলেন। ভুলবশত প্রহরীরা গোবিন্দ সিংহের পরিবর্তে ওই জয় সিংহকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেন। বানিয়াচং রাজা গোবিন্দ সিংহের প্রাণ এভাবে রক্ষা পাওয়ায় তিনি কৌশলে আকবরের কাছ থেকে নানা সুযোগ গ্রহণ করেন। তিনি আকবরের কাছে প্রাণভিক্ষা চান এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। গোবিন্দ সিংহের নাম হয় হাবিব খাঁ। আকবর গোবিন্দ সিংহকে তার হৃতরাজ্য পুনরায় দান করেন। জগন্নাথপুরের রাজা বিজয় সিং দেশে ফিরার কিছু দিন পর বানিয়াচং রাজ গোবিন্দ সিংহ ওরফে হাবিব খাঁ'র সাথে বিবাদে পরে হাবিব খাঁ'র গুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হলে লাউড় এবং জগন্নাথপুর রাজ্যদ্বয় হাবিব খাঁ'র অধিকার ভুক্ত হয় । বানিয়াচং রাজ্যের সাথে হতা-হতীতে জগন্নাথপুর রাজ্যের রাজ বংশ ধ্বংশ হয়। প্রায় শতরে'শ শতকের পরে লাউড় জগন্নাথপুর রাজ্য স্বাধীনতা হারায় এবং বানিয়াচং রাজ বংশ পরে মোঘলরা এর নিয়ন্ত্রক হন। এ ভাবে প্রাচীন রাজ্যগুলো একসময় জমিদারী এস্টেটের অধিনে আসে । ইংরেজ শাসনামলে ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সুনামগঞ্জকে মহকুমায় উন্নীত করা হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রশারে ১৯২২ সালে জগন্নাথপুর থানা গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগে এই অঞ্চলদ্বয় পাকিস্তানে অন্তরভুক্ত হয়ে বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রাম বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক অঞ্চলে রূপান্তর হয় । পরবর্তীকালে উন্নীত থানা পরিষদ উপজেলা পরিষদে রূপান্তরিত হয়। [][]

মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথপুর

[সম্পাদনা]

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট জগন্নাথপুর উপজেলায় শান্তি সভার নামে রাজাকারেরা শ্রীরামসি হাইস্কুলে স্থানীয় শিক্ষক, কর্মচারী, ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ও সাধারণ লোকজনের একটি সমাবেশের আয়োজন করে। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা উক্ত সভার ১২৬জন লোককে হত্যা করে এবং গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া ৮ সেপ্টেম্বর পাকসেনারা এ উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারে ৩০জন লোককে হত্যা করে এবং ১৫০টি দোকান জ্বালিয়ে দেয়।[]

ভাষা ও সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

অত্র এলাকার লোকজন সাধারণত সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। জগন্নাথপুর লোকসংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ।

জনসংখ্যার উপাত্ত

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কিত রেকর্ড অনুযায়ী বর্তমান (২০১০) জনসংখ্যা ২,২৫,২৭১ জন।

শিক্ষা

[সম্পাদনা]

উপজেলার সর্বপ্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুবাজপুর লালচন্দ্র নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে স্কুলটি আর নেই। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলার প্রথম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৈয়দপুর সৈয়দীয়া শামছিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথপুর উপজেলায় সর্বপ্রথম উচ্চ বিদ্যালয় পাইলগাঁও ব্রজনাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই উপজেলায় ১২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৮টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২৩টি আলিয়া মাদরাসা, এবং ২০টি কওমি মাদরাসা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হল: জগন্নাথপুর ডিগ্রি কলেজ, স্বরূপচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং শাহজালাল কলেজ, মিরপুরে অবস্থিত আটঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ।

অর্থনীতি

[সম্পাদনা]
জগন্নাথপুরের হ্রদ

কৃষিপণ্যের মধ্যে ধান আর পাটের বিপুল আবাদ রয়েছে। এছাড়া আছে হাওর ভরা মাছ। পাশাপাশি উপজেলার প্রচুর লোক বহির্দেশে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বসবাস করায় তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপরও এলাকার অর্থনীতি নির্ভরশীল। এছাড়াও এলাকার উন্নয়নের জন্য সরকারি অবদানও অব্যাহত রয়েছে। বোর মৌসুমে জগন্নাথপুর উপজেলার ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন।

যাতায়াত ও যোগাযোগ

[সম্পাদনা]

উপজেলার উল্লেখযোগ্য সড়কগুলো হল: বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর বাইপাস সড়ক, ভবের বাজার-সৈয়দপুর-নয়াবন্দর-গোয়ালাবাজার সড়ক, জগন্নাথপুর-কুবাজপুর-পাইলগাওঁ-কুশিয়ারা নদী-ইনায়েতগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়ক, পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি বিশ্বরোড। উপজেলার পাকা রাস্তাগুলো হল: জগন্নাথপুর-ভবের বাজার-মীরপুর-বিশ্বনাথ সড়ক, জগন্নাথপুর-শিবগঞ্জ বাজার সড়ক, জগন্নাথপুর-পাগলা সড়ক, ভবের বাজার-সৈয়দপুর-শাহারপাড়া-নয়াবন্দর-গোয়ালাবাজার সড়ক, নয়াবন্দর-দাওরাই বাজার-পাঠকুরা বাজার সড়ক, মীরপুর-রসুলগঞ্জ বাজার সড়ক, পাইলগাওঁ হাই স্কুল-কাতিয়া-বড় ফেচী বাজার-বেগমপুর সড়ক, জগন্নাথপুর-কলকলিয়া-তেলিকোনা সড়ক। এছাড়া প্রস্তাবিত অনেক সড়ক রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। "এক নজরে জগন্নাথপুর"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুন ২৮, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৭, ২০১৯ 
  2. "ইউনিয়নসমূহ - জগন্নাথপুর উপজেলা"jagannathpur.sunamganj.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৫ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০২০ 
  3. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ, তৃতীয় ভাগ, পঞ্চম খণ্ড, দ্বিতীয় অধ্যায়, অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি; প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম; উৎস প্রকাশন, ২০০৪
  4. সিলেটের গীতিকা, সমাজ ও সংস্কৃতি, ডঃ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ
  5. শ্রীহট্রের ইসলাম জ্যোতি মুফতি আজহার উদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী
  6. ইসকন্দর গীতি, পীর শাহ মোহাম্মদ ইসকন্দর মিয়া।
  7. সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত: প্রাচীন ইতিহাসে সিলেট বিভাগ নিবন্ধ, মোহাম্মদ মুমিনুল হক, গ্রন্থ প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০০১
  8. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  9. বাংলাপিডিয়ায় জগন্নাথপুর উপজেলা[১]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]