Location via proxy:   [ UP ]  
[Report a bug]   [Manage cookies]                
বিষয়বস্তুতে চলুন

বাগদাদ অবরোধ (১২৫৮)

স্থানাঙ্ক: ৩৩°২০′০০″ উত্তর ৪৪°২৬′০০″ পূর্ব / ৩৩.৩৩৩৩° উত্তর ৪৪.৪৩৩৩° পূর্ব / 33.3333; 44.4333
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাগদাদ অবরোধ (১২৫৮)
মূল যুদ্ধ: মঙ্গোল অভিযান

হালাকু খানের বাহিনীর বাগদাদ হামলা
তারিখ২৯ জানুয়ারি – ১০ ফেব্রুয়ারি ১২৫৮ (১৩ দিন)
অবস্থান
বাগদাদ, বর্তমান ইরাক
ফলাফল মঙ্গোলদের বিজয়
বিবাদমান পক্ষ

মঙ্গোল সাম্রাজ্য

ইলখানাত
সিলিসিয়ার আর্মেনীয় রাজ্য
জর্জিয়া (রাষ্ট্র) জর্জিয়া
এন্টিওক রাজ্য
পারস্য
মঙ্গোলীয় চীন

আব্বাসীয় খিলাফত

সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
হালাকু খান
আরগুন আঁকা
বাইজু
বুকা তিমুর
সুনিতাই
কিতবুকা
কোকে ইলগে[]
আল-মুসতাসিম  মৃত্যুদণ্ড
মুজাহিদউদ্দিন
সুলাইমান শাহ  মৃত্যুদণ্ড
কারাসানকার
আল-আশরাফ মূসা
জড়িত ইউনিট
৪০,০০০+ মঙ্গোল, মূলত অশ্বারোহী[]
১২,০০০ আর্মেনীয় অশ্বারোহী[]
৪০,০০০ আর্মেনীয় পদাতিক[]
জর্জিয়ান পদাতিক
১,০০০ চীনা বোমা নিক্ষেপকারী ও প্রকৌশলী
তুর্ক ও পার্সিয়ান সৈনিক
অশ্বারোহী
পদাতিক
শক্তি
১,২০,০০০[]–১,৫০,০০০[] ৫০,০০০
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অজ্ঞাত ৫০,০০০ সৈনিক
২,০০,০০০–৮,০০,০০০ বেসামরিক (পশ্চিমা সূত্র)[]
২০,০০,০০০ বেসামরিক (আরব সূত্র)[]

বাগদাদ অবরোধ ১২৫৮ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এসময় হালাকু খান বাগদাদ অবরোধ করেছিলেন। অবরোধের পর মঙ্গোলদের কাছে বাগদাদ আত্মসমর্পণ করে।

হালাকু খান ইরানে হাসাসিনদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পর হাসাসিনরা আত্মসমর্পণ করে। এরপর তিনি বাগদাদের দিকে অগ্রসর হয়ে খলিফা আল-মুসতাসিমকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। খলিফা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার পর হালাকু খান শহর অবরোধ করেন। ১২ দিন পরে শহর আত্মসমর্পণ করে। এরপর মঙ্গোলরা বাগদাদে প্রবেশ করে নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে। হামলায় বাগদাদের বিখ্যাত বাইতুল হিকমাহ গ্রন্থাগার ধ্বংস হয়ে যায়। খলিফাসহ শহরের অসংখ্য বাসিন্দাকে হত্যা করা হয়। ফলে শহর জনশূণ্য হয়ে পড়ে। এই অবরোধকে ইসলামি স্বর্ণযুগের সমাপ্তি হিসেবে দেখা হয়।[]

অভিযান

[সম্পাদনা]

পরিকল্পনা

[সম্পাদনা]

১২৫৭ সালে মংকে খান মেসোপটেমিয়া, সিরিয়া ও ইরানে শক্ত কর্তৃত্ব স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার ভাই হালাকু খানকে খিলাফতসহ বিভিন্ন মুসলিম রাজ্য জয় করার দায়িত্ব দেন। আত্মসমর্পণ যারা করবে না তাদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়।

অভিযানের জন্য হালাকু খান একটি বড় আকারের বাহিনী গড়ে তোলেন।[] বাহিনীর সেনাপতিদের মধ্যে ছিলেন আরগুন আগা, বাইজু, বুকা তিমুর, গুয়ো কান, কিতবুকা, হালাকু খানের ভাই সুনিতাইসহ বিভিন্ন যুদ্ধনেতা[] এছাড়াও সিলিসিয়ার আর্মেনীয় ও এন্টিওকের ফ্রাঙ্করাও সেনাদল নিয়ে যোগ দেন।[১০] জর্জিয়াও তাদের সাথে যোগ দেয়।[১১] ১,০০০ চীনা গোলন্দাজ সৈনিক বাহিনীতে যোগ দেয়।[১২] পাশাপাশি তুর্ক ও পার্সিয়ান যোদ্ধারাও বাহিনীতে যোগ দেয়।

প্রারম্ভিক অভিযান

[সম্পাদনা]

হালাকু খান ইরানের দিকে অগ্রসর হয়ে লুরদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। তিনি বুখারা এবং খোয়ারিজম-শাহ রাজবংশের অবশিষ্টদের উপর হামলা করেন। তাদের পরাজিত করার পর তিনি হাসাসিনদের উপর নজর দেন। তিনি হাসাসিনদের ঘাটি আলামুত দুর্গ দখল করেন। মঙ্গোলরা তৎকালীন হাসাসিন প্রধান ইমাম রুকনউদ্দিন খুরশাহকে হত্যা করে।

বাগদাদ দখল

[সম্পাদনা]

হালাকু খানের বাগদাদ যাত্রা

[সম্পাদনা]

হাসাসিনদের পরাজিত করার পর হালাকু খান আল-মুসতাসিমকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন। উজিরে আজম ইবনুল আলকামির পরামর্শে খলিফা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। ইতিহাসবিদদের মতে এর কারণ ছিল বিশ্বাসঘাতকতা[১৩] ও অযোগ্যতা।[১৪] তিনি খলিফাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন যে মঙ্গোলরা সমস্যা সৃষ্টি করলে মুসলিম বিশ্ব থেকে সহায়তা আসবে।

১১ জানুয়ারি নাগাদ মঙ্গোলরা শহরের কাছে পৌছে যায়।[১৪] তারা দজলা নদীর উভয় তীরে অবস্থান নেয়। আল-মুসতাসিম শেষপর্যন্ত যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন এবং মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে ২০,০০০ অশ্বারোহীর একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। এই অশ্বারোহীরা মঙ্গোলদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়।[১৪]

শহর অবরোধ

[সম্পাদনা]
১৪শ শতাব্দীর চিত্রকর্মে হালাকু খানের বাহিনী কর্তৃক একটি শহর অবরোধ। এতে অবরোধ ইঞ্জিন দেখা যাচ্ছে।।

২৯ জানুয়ারি মঙ্গোলরা বাগদাদ অবরোধ করে। তারা শহরের চারদিকে পরিখা খনন করে। শহরের দেয়াল ভাঙার জন্য অবরোধ ইঞ্জিন ও কেটাপুল্ট ব্যবহার করা হয়েছিল। ৫ ফেব্রুয়ারি নাগাদ তারা প্রতিরক্ষার উল্লেখযোগ্য অংশ ভেদ করতে সক্ষম হয়। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আল-মুসতাসিম হালাকু খানের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু হালাকু খান রাজি হননি। বাগদাদের প্রায় ৩,০০০ গণ্যমান্য ব্যক্তি হালাকু খানের সাথে আলোচনার চেষ্টা করলে তাদেরকে হত্যা করা হয়।[১৫] পাঁচদিন পর ১০ ফেব্রুয়ারি শহর আত্মসমর্পণ করে। ১৩ তারিখ মঙ্গোলরা শহরে প্রবেশ করে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে।

ধ্বংসযজ্ঞ

[সম্পাদনা]
হালাকু খানের হাতে খলিফা আল-মুসতাসিমের বন্দীত্ব। ১৫শ শতাব্দীর লা লিভ্রে দেস মারভেলিস বইয়ের চিত্র।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রে মঙ্গোলদের নিষ্ঠুরতার বর্ণনা রয়েছে। বাগদাদের বাইতুল হিকমাহ গ্রন্থাগার এসময় ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রচিত অসংখ্য মূল্যবান বই হারিয়ে যায়। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী দজলা নদীতে অসংখ্য বই ফেলে দেয়ার ফলে নদীর পানি বইয়ের কালির কারণে কালো হয়ে গিয়েছিল। পালিয়ে যেতে চেষ্টা করা নাগরিকদেরকে মঙ্গোলরা গণহারে হত্যা করে। এসময় নারী ও শিশুদেরকেও হত্যা করা হয়। এই হত্যাযজ্ঞে প্রায় ৯০,০০০ এর মত নাগরিক নিহত হয়েছে বলে অভিমত রয়েছে।[১৬] অন্যান্য সূত্রে ভিন্ন সংখ্যা পাওয়া যায়। ১৪শ শতাব্দীর ইতিহাসবিদ ওয়াসসাফের মতে মৃতের সংখ্যা লক্ষাধিক ছিল। দ্য নিউ ইয়র্কারের ইয়ান ফ্রেজিয়ারের মতে মৃতের সংখ্যা ২,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০।[১৭] মঙ্গোলরা মসজিদ, প্রাসাদ, গ্রন্থাগার, হাসপাতালে লুটপাট চালায়। ফলে কয়েক প্রজন্ম ধরে গড়ে উঠা সব ইমারত ধ্বংস হয়ে যায়।

খলিফা আল-মুসতাসিম গ্রেপ্তার হন। তাকে শহরের বাসিন্দাদেরকে হত্যার দৃশ্য দেখতে বাধ্য করা হয়। মঙ্গোলরা রাজকোষেও লুটপাট চালায়। অধিকাংশ সূত্র অনুযায়ী হত্যার জন্য তারা খলিফাকে কাপড়ে মুড়ে তার উপর ঘোড়া চালিয়ে দেয়। তবে পর্যটক মার্কো পোলোর বর্ণনা অনুযায়ী খলিফাকে অভুক্ত রেখে মেরে ফেলা হয়েছিল।[১৮]

পরবর্তী অবস্থা

[সম্পাদনা]

বাগদাদ পুনর্নির্মাণের জন্য হালাকু খান ৩,০০০ মঙ্গোল সৈনিক রেখে যান। আতা-মালিক জুয়াওইনিকে বাগদাদ, নিম্ন মেসোপটেমিয়া ও খুজিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। হালাকু খানের খ্রিষ্টান স্ত্রী দকুজ খাতুন বাগদাদের খ্রিষ্টান বাসিন্দাদের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।[১৯][২০] হালাকু খান নেস্টরিয়ান ক্যাথলিক মার মাকিখাকে রাজ প্রাসাদ গ্রহণের প্রস্তাব দেন এবং তার জন্য একটি ক্যাথেড্রাল নির্মাণের নির্দেশ দেন।[২১]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. John Masson Smith, Jr. Mongol Manpower and Persian Population, pp.276
  2. John Masson Smith, Jr. - Mongol Manpower and Persian Population, pp.271-299
  3. L. Venegoni (2003). Hülägü's Campaign in the West - (1256-1260), Transoxiana Webfestschrift Series I, Webfestschrift Marshak 2003.
  4. National Geographic, v. 191 (1997)
  5. Andre Wink, Al-Hind: The Making of the Indo-Islamic World, Vol.2, (Brill, 2002), 13.  – via Questia (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  6. The different aspects of Islamic culture: Science and technology in Islam, Vol.4, Ed. A. Y. Al-Hassan, (Dergham sarl, 2001), 655.
  7. Matthew E. Falagas, Effie A. Zarkadoulia, George Samonis (2006). "Arab science in the golden age (750–1258 C.E.) and today", The FASEB Journal 20, pp. 1581–1586.
  8. "European & Asian History"telusplanet.net। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১৬ 
  9. Rashiddudin, Histoire des Mongols de la Perse, E. Quatrieme ed. and trans. (Paris, 1836), p. 352.
  10. Demurger, 80-81; Demurger 284
  11. Khanbaghi, 60
  12. L. Carrington Goodrich (২০০২)। A Short History of the Chinese People (illustrated সংস্করণ)। Courier Dover Publications। পৃষ্ঠা 173। আইএসবিএন 0-486-42488-X। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-২৮In the campaigns waged in western Asia (1253-1258) by Jenghis' grandson Hulagu, "a thousand engineers from China had to get themselves ready to serve the catapults, and to be able to cast inflammable substances." One of Hulagu's principal generals in his successful attack against the caliphate of Baghdad was Chinese. 
  13. Zaydān, Jirjī (১৯০৭)। History of Islamic Civilization, Vol. 4। Hertford: Stephen Austin and Sons, Ltd.। পৃষ্ঠা 292। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  14. Davis, Paul K. (২০০১)। Besieged: 100 Great Sieges from Jericho to Sarajevo। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 67। 
  15. Fattah, Hala। A Brief History of Iraq। Checkmark Books। পৃষ্ঠা 101। 
  16. (Sicker 2000, p. 111)
  17. Frazier, Ian (২৫ এপ্রিল ২০০৫)। "Annals of history: Invaders: Destroying Baghdad"The New Yorker। পৃষ্ঠা 4। 
  18. "In Threatening Baghdad, Militants Seek to Undo 800 Years of History"
  19. Maalouf, 243
  20. Runciman, 306
  21. Foltz, 123

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]