লাল বনমোরগ
লাল বনমোরগ Gallus gallus | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | গ্যালিফর্মিস |
পরিবার: | Phasianidae |
উপপরিবার: | Phasianinae |
গণ: | Gallus |
প্রজাতি: | G. gallus |
দ্বিপদী নাম | |
Gallus gallus (লিনিয়াস, ১৭৫৮) | |
লাল বনমোরগের বিস্তৃতি |
লাল বনমোরগ বা লাল বনমুরগি (লাতিন ভাষায়: Gallus gallus) (ইংরেজি: Red Junglefowl) ফ্যাসিয়ানিডি (Phasianidae) গোত্রের অন্তর্গত সর্বাধিক পরিচিত একটি প্রজাতি।[২] ধরে নেওয়া হয় পৃথিবীর সমস্ত মোরগ-মুরগী আবির্ভূত হয়েছে এই বন মোরগের প্রজাতির কিছুকিছু নমুনার গৃহপালনের মাধ্যমে, তাতে লেগে গেছে কয়েক হাজার বছর। গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছায় নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. বনমোরগকে Least Concern বা আশঙ্কাহীন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।[১][৩] বাংলাদেশের ১৯৭৪ [৪] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৫]
বিস্তৃতি
[সম্পাদনা]নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, ভারত, বাংলাদেশ, চীন, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, লাওস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় এ পাখি দেখা যায়। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব তিমুর, ফিজি, জ্যামাইকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, নাউরু, পালাউ, পুয়ের্তো রিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে এদের অবমুক্ত করা হয়েছে।[১]
বাংলাদেশে অবস্থা
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বন, চা-বাগান, শেরপুর ও মধুপুর শালবন ও সুন্দরবনে বনমোরগ বাস করে। একসময় প্রায় সব ধরনের বন-জঙ্গলেই এদের দেখা যেত। কিন্তু ব্যাপক শিকারের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে এরা কমে গেছে। আদিবাসীদের কারণে পাহাড়ি বনেও এরা প্রায় বিলুপ্তির পথে। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো কোনো হাটবাজারে বনমোরগ বিক্রি হয়। তবে সিলেটের চা-বাগান ও সুন্দরবনে এরা মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছে।[৬][৭]
উপপ্রজাতি
[সম্পাদনা]অঞ্চলভেদে লাল বনমোরগের একাধিক উপপ্রজাতি দেখা যায়। এরা হল:
- G. g. gallus, ইন্দোচীন
- G. g. bankiva, জাভা
- G. g. jabouillei, ভিয়েতনাম
- G. g. murghi, ভারত ও বাংলাদেশ
- G. g. spadiceus, মিয়ানমার
- G. g. domesticus, গৃহপালিত মোরগ-মুরগী।
বিবরণ
[সম্পাদনা]লাল বনমোরগ খুব সুন্দর ঝালরাবৃত লালচে, সোনালি ও কালো পালক জড়িত পিঠ ও ডানাসম্বৃদ্ধ একটি পাখি। কপোল থেকে পালকহীন মাংসল মণি বা কোম্ব বের হয়েছে। ঠোঁটের নিচে ও কানের সামনে থেকে বের হয়েছে দুটি লাল লতিকা বা পর্দা। পালকহীন চোখের চারিদিকের চামড়া লালচে, নিচের দিকে কালচে। প্রলম্বিত লেজের পালক নিচের দিকে বাঁকানো। বনমুরগী তুলনায় ছোট ও লেজে বাহারি পালক নেই। দেহের পালক সোনালী আভাযুক্ত বাদামী, তার সাথে সামান্য গাঢ় দাগ। মণি, লতিকা ও চোখের কোল বনমোরগের তুলনায় তেমন দর্শনীয় নয়।[২]
আচরণ
[সম্পাদনা]লাল বনমোরগ-মুরগী একাকী, জোড়ায় বা ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়। মাটি থেকে কুড়িয়ে বিভিন্ন শস্যদানা, ঘাসের গোড়া, কচিপাতা, কেঁচো, কীটপতঙ্গ, ফল এসব খায়। খুব ভোরে ও সন্ধ্যার আগে আগে বনের পাশের খোলা জায়গায় খাবার খেতে আসে। শীতের সময় কুয়াশা থাকা অবস্থায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। বনের কোনো গাছতলায় পাকা ফল ঝরে পড়া শুরু করলে বনমোরগ-বনমুরগী প্রতিদিন সকাল-বিকাল সেই গাছতলায় আসে। আবার বনের বড় গাছে উঠেও এদের ফল খেতে দেখা গেছে। রাত কাটায় উঁচু গাছের ডালে বা বাঁশঝাড়ে। সামান্য শব্দে ভীত হয়ে উড়ে গিয়ে বসবে গাছের মগডালে। পালানোর সময় পোষা মুরগির মতোই কক্ কক্ করে ডাকে।[৬][৭]
লাল বনমোরগ বিশেষভাবে একটি আঞ্চলিক পাখি, অর্থাৎ এরা নিজেদের নির্ধারিত সীমায় বসবাস করে, অন্যের অনুপ্রবেশ মোটেও বরদাশত করতে পারে না। প্রজননকালের শুরুতে এ আচরণ অধিকহারে দেখা যায়। এসময় দলপতি বা শক্তিমান মোরগ তিন থেকে পাঁচটি মুরগী নিয়ে দল গঠন করে ঘুরে বেড়ায়। কমবয়েসী মোরগেরা পৃথকভাবে দুই বা তিন সদস্যের দল গঠন করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, লাল বনমুরগীর বীর্য ফেলে দেবার ক্ষমতা রয়েছে। এরা কেবল দলপতি মোরগের বীর্যই গ্রহণ করে, অন্যসব মোরগের বীর্য ফেলে দেয়।[৮]
প্রজনন
[সম্পাদনা]জানুয়ারি থেকে অক্টোবর প্রজননকাল। বনের নির্জন স্থানে পায়ের নখ আঁচড়িয়ে মাটিতে সামান্য গর্ত করে তাতে লাল বনমুরগি শুকনো ঘাস ও কাঠিকুটি বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে পাঁচ-ছয়টি; রং হালকা থেকে গাঢ় বাদামি। লাল বনমুরগি শুধু ডিমে তা দেয় ও ছানাদের লালন-পালনে ব্যস্ত থাকে। ডিম ফোটে ২০-২১ দিনে। ফোটার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ছানাগুলো বাসা ছাড়ে ও মায়ের সঙ্গে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে।[৬][৭] ১২ সপ্তাহ বয়সে ছানারা দল থেকে বেরিয়ে পড়ে নতুন দলে প্রবেশ করে বা নিজেরাই দল গঠন করে।[৮]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ [১], আই. ইউ. সি. এন. এর লাল তালিকাতে লাল বনমোরগ বিষয়ক পাতা। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Gallus" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ ক খ বাংলাদেশের পাখি, রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ১১২।
- ↑ [২] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ জুন ২০১১ তারিখে, BirdLife International এ বনমোরগ বিষয়ক পাতা।
- ↑ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৮।
- ↑ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৪৮
- ↑ ক খ গ [৩][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], মনভোলানো বনমোরগ, সৌরভ মাহমুদ, ৩১-০১-২০১১, দৈনিক প্রথম আলো। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "মনভোলানো" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ ক খ গ [৪] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ মার্চ ২০১৯ তারিখে, বনমোরগের ছানা, আ ন ম আমিনুর রহমান, ৩০-০৬-২০১১, দৈনিক প্রথম আলো। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "test" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ ক খ [৫] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে, Encyclopedia of Life এ বনমোরগ বিষয়ক পাতা।
- আইইউসিএন লাল তালিকার ন্যূনতম উদ্বেগজনক প্রজাতি
- এশিয়ার পাখি
- ভারতের পাখি
- বাংলাদেশের পাখি
- নেপালের পাখি
- ভুটানের পাখি
- চীনের পাখি
- মালয়েশিয়ার পাখি
- মালদ্বীপের পাখি
- লাওসের পাখি
- কম্বোডিয়ার পাখি
- পাকিস্তানের পাখি
- সিঙ্গাপুরের পাখি
- ফিলিপাইনের পাখি
- মিয়ানমারের পাখি
- ভিয়েতনামের পাখি
- পূর্ব তিমুরের পাখি
- ইন্দোনেশিয়ার পাখি
- নাউরুর পাখি
- অস্ট্রেলিয়ার পাখি
- গ্যালাস
- ১৭৫৮-এ বর্ণিত পাখি
- কার্ল লিনিয়াস কর্তৃক নামকরণকৃত ট্যাক্সা
- পূর্ব হিমালয়ের পাখি
- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাখি