সুলতানা রাজিয়া
রাজিয়া সুলতান | |||||
---|---|---|---|---|---|
সুলতান | |||||
দিল্লির সুলতান | |||||
রাজত্ব | ১২৩৬− ২০ এপ্রিল ১২৪০ | ||||
পূর্বসূরি | রুকনউদ্দিন ফিরোজ | ||||
উত্তরসূরি | মুইজউদ্দিন বাহরাম | ||||
মৃত্যু | ১৫ অক্টোবর ১২৪০ কৈথল, দিল্লী সালতানাত | ||||
সমাধি | তুর্কমান গেটের কাছে বুলবুলি খানা, দিল্লি | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | ইখতিয়ার উদ-দীন আলতুনিয়া | ||||
| |||||
রাজবংশ | মামলুক | ||||
পিতা | শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ | ||||
মাতা | কুতুব বেগম | ||||
ধর্ম | সুন্নি |
রাজিয়া সুলতান (১২০৫ - ১২৪০) (ফার্সি / উর্দূ: رضیہ سلطانہ) পুরো নাম সুলতান রাজিয়া-উদ-দুনিয়া ওয়া উদ্দিন[১] ছিলেন সুলতান ইলতুৎমিসের কন্যা ও ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা শাসক। তিনি একাধারে একজন ভালো প্রশাসক ও সেনাপতি ছিলেন; তাছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে একজন দক্ষ সৈন্য হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। সুলতান ইলতুৎমিসের সবথেকে যোগ্য পুত্র সুলতানের জীবদ্দশায় মৃত্যু বরণ করলে সুলতান তার কন্যা রাজিয়া কে দিল্লির শাসক হিসেবে মনোনীত করে যান। যখনই ইলতুৎমিসের রাজধানী ছাড়তে হত, তিনি তখন তার কন্যা রাজিয়াকে শাসনভার বুঝিয়ে দিয়ে যেতেন। রাজিয়া ছিলেন সুলতানের জ্যেষ্ঠা কন্যা, বুদ্ধিমতী ও যুদ্ধবিদ্যায় পটু।[২]
সুলতান ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর তার আরেক পুত্র রোকনুদ্দিন ফিরোজ দিল্লির শাসন কেড়ে নেন এবং প্রায় সাত মাসের মত শাসন করেন। ১২৩৬ সালে দিল্লির জনগণের সাহায্য নিয়ে রাজিয়া সুলতান তার ভাইকে অপসারণ করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন।
নাম ও উপাধি
[সম্পাদনা]ইংরেজি ইতিহাস বইসমূহে রাজিয়ার নাম Raḍiyya[৩] বা Raziyya[৪] হিসাবেও অনুবাদ করা হয়েছে। কিছু আধুনিক লেখক "সুলতানা" শব্দটি ব্যবহার করেন, এটি একটি ভুল নাম কারণ এর প্রকৃত অর্থ "নারী শাসক" না বরং "রাজার স্ত্রী"। রাজিয়া'র নিজস্ব মুদ্রাগুলো তাকে সুলতান জালালত আল-দুনিয়া ওয়াল-দ্বিন বা আল-সুলতান আল-মুয়াজ্জম রাজিয়ত আল-দ্বিন বিনতে আল-সুলতান নামে অভিহিত করে। সালতানাতের সংস্কৃত ভাষার শিলালিপি তাকে জাল্লালাদিন বলে, আর প্রায় সমসাময়িক ইতিহাসবিদ মিনহাজ তাকে সুলতান রাজিয়ত আল-দুনিয়া ওয়া'ল দিন বিনতে আল-সুলতান বলে অভিহিত করেন।[৫]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]রাজিয়া তার পূর্বসূরি কুতব আদ্-দ্বীন আইবাকের তুর্কি ক্রীতদাস (মামলুক) দিল্লি সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুতমিশের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। রাজিয়া'র মা - কুতুব বেগম ছিলেন কুতুবুদ্দিন আইবেকের কন্যা[৪][৬] এবং শামসুদ্দিন ইলতুতমিশের প্রধান স্ত্রী।[৩] রাজিয়া ইলতুতমিশের বড় মেয়ে এবং সম্ভবত তার প্রথম সন্তান ছিল।[৩] সুলতান রাজিয়া ছিলেন মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী শাসক । তৎকালীন সময়ে একজন নারী শাসককে মেনে নেয়ার মানসিকতা সমাজের ছিল না। সুলতান হিসেবে রাজিয়াকে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। রাজিয়ার সিংহাসনে আরোহণের ক্ষেত্রে প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয় । এটিকে তারা অনিয়মজনিত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে রাজিয়াকে উৎখাতের জন্য দিল্লির দিকে যুদ্ধযাত্রা করেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী জুনাইদিও এতে যোগদেন।
শাসনকার্য
[সম্পাদনা]রাজিয়া সুলতান সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। শাসনকার্য দৃঢ়ভাবে পালন করার জন্য তিনি নারীত্বের আবরণ পরিত্যাগ করে, পুরুষের পোশাক গ্রহণ করেন। এই পোশাকে তিনি জনসম্মুখে, প্রশাসনে ও যুদ্ধক্ষেত্রে আসতেন। ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে রাজিয়া জালাল উদ্দিন ইয়াকুত নামক একজন ইথিওপিয়ান দাসকে নিয়োগ দেন। ইয়াকুতকে তিনি অত্যন্ত বিশ্বাস করতেন। এর ফলে তুর্কি আমিরগণ রাজিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নামেন। ১২৩৯ সালে লাহোরের তুর্কি গভর্নর তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। রাজিয়া তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, গভর্নর প্রথমে পালিয়ে যান ও পরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারপর ভাতিন্ডার গভর্নর বিদ্রোহ করেন। রাজিয়া যখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন তখন তার তুর্কি কর্মকর্তারা তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে এবং তার ভাই বাহারামকে সুলতান ঘোষণা করে। রাজিয়া ভাতিন্ডার গভর্নরকে বিয়ে করে তার সাহায্যে ক্ষমতা ফিরে পাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজিয়া সুলতান পরাজিত হন ও পলায়ন করেন। নারী হওয়ার কারণে ও প্রকাশ্যে পর্দাপ্রথার বিরোধী হয়ে শাসনকাজ পরিচালনা করার জন্য উলামা ও প্রভাবশালী শ্রেণির বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। এরকম নানান ষড়যন্ত্রের একটি অংশ ছিলো চল্লিশ জন ক্রীতদাসদের সমন্বয়ে গঠিত “চল্লিশ চক্র” বা তার্কান-ই-চিহালগানী।[৭] ১২৪০ পলায়নকালে তার একজন ভৃত্য যে কিনা এই চক্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তাকে খাদ্যে বিষ দিয়ে হত্যা করে। এই ভৃত্যই তাকে আশ্রয় দিয়েছিল।
সমাধি
[সম্পাদনা]রাজিয়া সুলতানের সমাধিস্থল নিয়ে বিতর্ক আছে। একটি মত অনুসারে তার দেহ হরিয়ানার কোইথালে সমাধিস্থ আছে, অপরদিকে মনে করা হয় তার সমাধি পুরোনো দিল্লির বুলবুল-ই-খানা মহল্লায় আছে। পুরোনো দিল্লির সমাধিটি বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত।
জনপ্রিয় গণমাধ্যমে
[সম্পাদনা]তার জীবনী নিয়ে ১৯৮৩ সালে কামাল আমরোহীর পরিচালনায় তৈরী হয় চলচ্চিত্র "রাজিয়া সুলতান"।[৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Minhaj-i-Siraj, Abu-'Umar-i-'Usman (1873). The Tabakat-i-Nasiri. Translated by Major H. G. Raverty. London: Asiatic Society of Bengal. p. 637.
- ↑ কোকা আন্তোনভা, গ্রিগোরি বোনগার্দ-লেভিন, গ্রিগোরি কতোভস্কি (১৯৮২)। ভারতবর্ষের ইতিহাস। মস্কো: প্রগতি প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২৭৪।
- ↑ ক খ গ Peter Jackson 2003, পৃ. 46।
- ↑ ক খ Guida M. Jackson 1999, পৃ. 341।
- ↑ K. A. Nizami 1992, পৃ. 237।
- ↑ Sudha Sharma 2016, পৃ. 141 quote:"But as per Abu-Umar-i-Usman Minhaj-ud-din Siraj (Tabaqat-iNasiri), Turkan Khatun was the name of Razia's mother and not of this lady [Shah Turkan]."
- ↑ ড. অতুল চন্দ্র রায় (১৯৯৬)। ভারতের ইতিহাস। কলকাতা: প্রান্তিক। পৃষ্ঠা ১১০গ।
- ↑ Razia Sultan, IMDb ইংরেজি ভাষায়
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Guida M. Jackson, সম্পাদক (১৯৯৯)। Women Rulers Throughout the Ages: An Illustrated Guide। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 341। আইএসবিএন 978-1-57607-091-8।
- K. A. Nizami (১৯৯২)। "The Early Turkish Sultans of Delhi"। Mohammad Habib; Khaliq Ahmad Nizami। A Comprehensive History of India: The Delhi Sultanat (A.D. 1206-1526)। 5 (Second সংস্করণ)। The Indian History Congress / People's Publishing House। ওসিএলসি 31870180।
- Muzaffar Husain Syed, সম্পাদক (২০১১)। Concise History of Islam। Vij Books। আইএসবিএন 978-93-82573-47-0।
- Peter Jackson (২০০৩)। The Delhi Sultanate: A Political and Military History। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-54329-3।
- Sudha Sharma (২০১৬)। The Status of Muslim Women in Medieval India। SAGE। আইএসবিএন 978-93-5150-565-5।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Project Continua: Biography of Sultan Raziyya bint Iltutmish
- উইকিমিডিয়া কমন্সে সুলতানা রাজিয়া সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।