Location via proxy:   [ UP ]  
[Report a bug]   [Manage cookies]                
বিষয়বস্তুতে চলুন

কৌণিক ভরবেগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পদার্থবিজ্ঞানে কৌণিক ভরবেগ, ভরবেগের ভ্রামক বা কৌণিক ভ্রামক দ্বারা এমন একটি ভেক্টর রাশিকে প্রকাশ করা হয়, যা কোনো অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণায়মান কোনো বস্তুর জড়তার ভ্রামক ও কৌণিক বেগের গুণফল থেকে পাওয়া যায়।

  চলন গতির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি m ভরের কোনো বস্তু →v  বেগে গতিশীল হলে তার ভরবেগ তথা রৈখিক ভরবেগ →P=m→v একটি গুরুত্বপূর্ণ রাশি। ঘূর্ণনগতির ক্ষেত্রে ভরবেগের অনুরূপ রাশি হচ্ছে কৌণিক ভরবেগ। কোনো বিন্দুর m সাপেক্ষে ভরবেগের ভ্রামকই হচ্ছে কণাটির কৌণিক ভরবেগ।

    সংজ্ঞা : কোনো বিন্দু বা অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান কোনো কণার ব্যাসার্ধ ভেক্টর এবং ভরবেগের ভেক্টর গুণফলকে ঐ বিন্দু বা অক্ষের সাপেক্ষে কণাটির কৌণিক ভরবেগ বলে।

[সম্পাদনা]


কোনো বস্তুর কৌণিক ভরবেগ হলো ঐ বস্তু গঠনকারী প্রত্যেকটি কণার কৌণিক ভরবেগের সমষ্টির সমান। কোনো অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণায়মান কোনো দৃঢ় বস্তুর কৌণিক ভরবেগ, (), এর জড়তার ভ্রামক () এবং কৌণিক বেগের () গুণফল থেকে পাওয়া যায়

এস. ও এস. আই. পদ্ধতিতে কৌণিক ভরবেগের একক হচ্ছে  kg m2 s−1 এবং মাত্রা সমীকরণ [L]=[ভরবেগ×দূরত্ব]=[MLT−1L]=[ML2T−1]

মান ও দিক :

[সম্পাদনা]

কৌণিক ভরবেগের মান, 𝐿 = 𝑟𝑃𝑠𝑖𝑛𝜃

এখানে 𝜃 হচ্ছে  𝑟  ও  𝑃  এর মধ্যবর্তী কোণ [চিত্র]। ঘূর্ণন কেন্দ্র হতে ভরবেগের ক্রিয়ারেখার লম্ব দূরত্ব হচ্ছে 𝑟𝑠𝑖𝑛𝜃 । অতএব, কোনো বস্তুকণার ভরবেগ ও ঘূর্ণন কেন্দ্র হতে ভরবেগের ক্রিয়া রেখার লম্ব দূরত্বের গূণফল কৌণিক ভরবেগের মান নির্দেশ করে।

𝑟  ও  𝑃  যে তলে অবস্থিত  𝐿  এর দিক হবে ঐ তলের লম্ব বরাবর। ক্রস গুণনের নিয়ম দ্বারা  𝐿 -এর দিক নির্ধারিত হবে।

  • কৌণিক ভরবেগের ইতিহাস:
একটি ঘূর্ণায়মান ক্ষেত্রে বল (F), টর্ক (τ), ভরবেগ (p), এবং কৌণিক ভরবেগের (L) সম্পর্ক, যেখানে (r) ব্যাসার্ধ
  1. প্রাচীন সময়:
    • গ্রিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানী আরিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এবং আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ঘূর্ণন এবং সরল যান্ত্রিক সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করলেও কৌণিক ভরবেগের স্পষ্ট ধারণা তাদের ছিল না।
  2. গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪-১৬৪২):
    • গ্যালিলিও প্রথমবারের মতো সরল গতিবিদ্যা ও বলবিজ্ঞানের ভিত্তিতে কাজ করেন এবং গতি ও ভরের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন। তার কাজগুলো কৌণিক ভরবেগের মূল সূত্রপাতের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
  3. আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭):
    • নিউটনের গতি ও বলের সূত্র কৌণিক ভরবেগের ধারণার ভিত্তি স্থাপন করে। তিনি তার তৃতীয় সূত্রে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা পরবর্তীতে কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষণ সূত্রের ভিত্তি হয়।
  4. ১৮ শতক:
    • ফরাসি বিজ্ঞানী লিওনার্ড ইউলার এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা কৌণিক ভরবেগের ধারণা আরও স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেন এবং এটি উন্নত করেন। ইউলারের কাজের ফলে ঘূর্ণন কৌণিক বেগের গাণিতিক মডেল আরও উন্নত হয়।
  5. ১৯ শতক:
    • পিয়েরে-সিমন লাপ্লাস এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা কৌণিক ভরবেগের ধারণার পরিমার্জন ও জ্যামিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেন।
  6. আধুনিক যুগ:
    • বর্তমানে কৌণিক ভরবেগ কোয়ান্টাম মেকানিক্স, মহাকাশবিজ্ঞান, এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিজ্ঞান শাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।


প্রাচীন ধারণা:

কৌণিক ভরবেগের ধারণা প্রাচীন গ্রিক দর্শনের সময় থেকেই প্রচলিত ছিল। এরিস্টটল এবং আর্কিমিডিসের কাজের মধ্যে ঘূর্ণনের ধারণা সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যায়।


ক্লাসিক্যাল পদার্থবিদ্যার যুগ:


আইজ্যাক নিউটন: নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রে ঘূর্ণন এবং সরলরেখায় গতির ধারণা বর্ণিত হয়েছিল। যদিও নিউটন সরাসরি কৌণিক ভরবেগের ধারণা প্রদান করেননি, তার সূত্রগুলি থেকে কৌণিক ভরবেগ সম্পর্কিত ধারণা উদ্ভাবিত হয়েছিল।


লিওনার্ড ইউলার: ১৭৫০-এর দশকে ইউলার ঘূর্ণনগত গতির সমীকরণ তৈরি করেন যা কৌণিক ভরবেগের গাণিতিক বিশ্লেষণের ভিত্তি স্থাপন করে


উন্নত ধারণা:১৮শ এবং ১৯শ শতাব্দীতে কৌণিক ভরবেগের ধারণা আরও বিকশিত হয়, যেখানে পিয়ের-সাইমন লাপ্লাস এবং জোসেফ-লুই ল্যাগ্রেঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা ঘূর্ণনগত গতি এবং এর সাথে সম্পর্কিত শক্তি এবং ভরের ধারণা নিয়ে কাজ করেন।


আধুনিক পদার্থবিদ্যা:

আলবার্ট আইনস্টাইন এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিকাশের সময়, কৌণিক ভরবেগ একটি মৌলিক ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষত কোয়ান্টাম মেকানিক্সে স্পিন এবং কৌণিক ভরবেগের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ।



নীলস বোরের পরমাণু মডেলে কোন শক্তি স্তরে ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ বের করা হয়েছিল।